শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তবুও বিভিন্নজনের বিভিন্ন ধরণের সীমাবদ্ধতা থাকে। অনেকেরই হাত, পা, চোখ, কান ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্নধরণের সমস্যা রয়েছে। এরকম মানুষরাই হতাশাগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি। তবে সবাই সেই হতাশা নিয়ে চলে না। অনেকে সেই হতাশাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলে। এমনই একজন হলেন নিক ভুজিসিক। যার চার হাত-পা এর মাঝে কোনোটাই নেই।
আল্লাহ আমাদের নিখুঁত ভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেখানে একটি অনুজীব এর চেয়েও ক্ষুদ্র কোনো এনজাইমের কারণে মানুষের দেহে বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটতে পারে। টেট্রা এনিমেলিয়া সিনড্রোমের ফলে মানুষ কোনো হাত পা ছাড়াই জন্ম নেয়। WNT3 জিনের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ভ্রুন অবস্থায় যখন মানুষের হাত পা সৃষ্টি হতে থাকে তখন WNT3 জিনের কারণে হাত পা সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে অন্যান্য বিভিন্ন অঙ্গও স্বাভাবিক গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে নিক ভুজিসিক এর ক্ষেত্রে শুধু হাত-পা সৃষ্টিই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অন্য সব কিছু রয়েছে স্বাভাবিক ।
হাত পা না থাকা সত্বেও একটুও দমে যান নি নিক ভুজিসিক। তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি উঠে দাড়াবার জন্য শতবার চেষ্টা করবো, যদি এর শতগুনও ব্যার্থ হই তবুও ব্যার্থতা মেনে নিয়ে এটা ছেড়ে উঠবো না। আমি আবার চেষ্টা করবো এবং বলবো, এটাই শেষ নয়”। এবং সত্যি সত্যিই তিনি যা বলেছেন তা করে দেখিয়েছেন।
নিক ভুজিসিক এর পুরো নাম নিকোলাস জেমস ভুজিসিক। তিনি জন্মসূত্রে সার্বিয়ান অস্ট্রেলিয়ান। বেরিস ভুজিসিক ও ডুসকা ভুজিসিক এর ঘরে নিক এর জন্ম হয় ১৯৮২ সালে। সন্তানের এরূপ আকৃতি দেখে নিক এর মা তাকে দেখতে ও কোলে নিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে অবশ্য স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা হিসেবে বিবেচনা করে মেনে নেন।
নিক ভুজিসিক পেশায় একজন প্রেরণা সৃষ্টিকারী বক্তা। কণ্ঠ দিয়েই বিশ্ব জয় করেছেন। প্রায় ৫৭ টির মত দেশে হাজারেরও বেশি বক্তৃতা দিয়েছেন। প্রেরণা যুগিয়েছেন চল্লিশ লক্ষাধিক মানুষের মনে। নিজে সকলের মাঝে প্রেরণা সৃষ্টি করে গেলেও ছোটবেলায় বেঁচে থাকার প্রেরণাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিদ্যালয়ে, প্রতিবেশিদের কাছ থেকে সর্বদা তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতো তার দেহের আকৃতির কারণে। তাই ১০ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
তার কোনো পূর্ণাঙ্গ হাত পা না থাকলেও বাম কোমড়ে দুই আঙুল বিশিষ্ট অপরিণত একটি পা রয়েছে। এই পা দিয়েই ভারসাম্য রক্ষা করে চলাফেরা করেণ তিনি। আমারা সাধারণত যেখানে একবার স্নাতক সম্পন্ন করতেই হিমশিম খেয়ে যাই সেখানে দুই আঙুল দিয়েই ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং ও অ্যাকাউন্টিং এর মত বিষয় নিয়ে দুইবার স্নাতক সম্পন্ন করেছেন গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর আগেই অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেয়া শুরু করেন নিক। ৫৩ বার প্রত্যাখিত হওয়ার পর নিক যখন প্রথম মঞ্চে উঠলেন বক্তব্য দেয়ার জন্য তখন দর্শক সারি প্রায় পুরোটাই খালি হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তাতেও হতাশ হননি।
ধীরে ধীরে মানুষের কাছে উনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন যে ঘন্টায় এক হাজার আটশত লোককে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য গিনেজ বুকেও তার নাম উঠেছে। মাত্র দুইটি আঙ্গুল থাকা সত্বেও উনি এতটা দ্রুত টাইপ করতে পারেন যা অনেক স্বাভাবিক মানুষও পারে না। মিনিটে উনি ৪৭ টি শব্দ টাইপ করতে পারেন।
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া, লস এঞ্জেলস, ক্যালির্ফোনিয়া সহ বিভিন্ন যায়গায় নিক “লাইফ উইদাউট লাইম্বস” নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। ২০১০সালে “লাইফ উইদাউট লিমিটসঃ ইন্সপাইরেশন ফর এ রিডিকুলাসলি গুড লাইফ” নামে নিক ভুজিসিক এর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। এটি প্রায় ৩০ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তাছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার খেতাব অর্জন করেছে। এটি ছাড়াও এখন পর্যন্ত উনি আরও পাঁচটি বই লিখেছেন। যেগুলোও প্রায় সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
২০১২ সালে নিক ভুজিসিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কানাই মিয়াহারার সাথে। তাদের এই বিয়ে ছিলো লাভ ম্যারেজ। মিয়াহারা কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো আপনার সন্তান যদি নিক এর মত হয় তাহলে আপনি কি করবেন? প্রতিউত্তরে তিনি বলেন আমি তাকে আরেকজন নিক ভুজিসিক হিসেবে তৈরি করবো। বর্তমানে তাদের দুটি ছেলেও রয়েছে। ২০১৩ সালে তাদের প্রথম পুত্র কিয়োশি ও ২০১৫ সালে তাদের দ্বিতীয় পুত্র দিজান এর জন্ম হয়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিক বর্তমানে দক্ষিণ ক্যালির্ফোনিয়া তে বসবাস করেন।
<iframe width=”304″ height=”150″ src=”https://www.youtube.com/embed/6P2nPI6CTlc” frameborder=”0″ allow=”autoplay; encrypted-media” allowfullscreen></iframe>